অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে : বরিশালের আগৈলঝাড়ায় টাকা চুরির মিথ্যা অপবাদে শুক্রবার রাতে এক সালিশ বৈঠকে এক শিশুকে নির্যাতন করে জরিমানা আদায় করে নাকে ক্ষত দেয়াসহ থুথু চাটিয়ে মানবাধিকার লংঘনের চরম অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে সালিশদার সাবেক সেনা সদস্য, বিএনপি নেতা ও সাবেক ইউপি সদস্যসহ ৪ জনকে ওই রাতেই আটক করেছে পুলিশ।
গতকাল রাতে উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের দাসেরহাট বাসস্ট্যান্ডে সালিশ বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, শুক্রবার দুপুরে ওই বাজারের চা বিক্রেতা দক্ষিণ শিহিপাশা গ্রামের নুরুল হক সরদারের ছেলে হাবুল সরদারের দোকান থেকে তার অনুপস্থিতিতে সাড়ে তিন হাজার টাকা চুরি হয়। দোকানের সামনে ওই সময় ৪-৫ জন শিশু খেলা করছিল। টাকা চুরির ঘটনায় অভিযোগের আঙ্গুল তোলা হয় দক্ষিণ শিহিপাশা গ্রামের গৌরাঙ্গ লাল দাসের ছেলে গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র দেবাশিষের দিকে। টাকা চুরির অভিযোগে শিশু দেবাশিষকে বাড়ি থেকে লোকজন ধরে আনে। এসময় তার পকেটে থাকা ১৬৬ টাকা দেখে তা রেখে দিয়ে চুরির অভিযোগে সালিশ বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
শুক্রবার রাতেই নুরুল হকের চায়ের দোকানে স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য উপজেলা জাতীয়তাবাদী মৎস্য দলের সভাপতি সবুজ বেপারী, সাবেক সেনা সদস্য মোক্তার বেপারী, স্থানীয় মাতুব্বর মালেক সিকদার, চৌকিদার আবুল হোসেন সালিশ বৈঠক বসায়। ওই বৈঠকে স্থানীয় উৎসুক অর্ধশতাধিক লোকজন উপস্থিত ছিলেন। সালিশ বৈঠকে শিশুর অভিভাবকদের উপস্তিতিতে দেবাশিষকে চোর সাব্যস্ত করে চড়-থাপ্পর মেরে দু’হাজার টাকা জরিমানা, থুথু ফেলে তা মুখ দিয়ে উঠানো ও নাকে খত দেয়ার রায় ঘোষণা করেন সাবেক সেনা সদস্য মোক্তার বেপারী। সালিশ বৈঠকের রায় বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় সাবেক ইউপি সদস্য বিএনপি নেতা সবুজ বেপারীকে। তিনি জরিমানার টাকা তাৎক্ষণিক আদায় করে। অন্যান্য রায়ও বাস্তবায়ন করে সে। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন সালিশ বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি। গোপন সংবাদের খরব পেয়ে এসআই হাবিবুর রহমান সালিশদার মোকতার বেপারী, সবুজ বেপারী, মালেক শিকদার ও চা বিক্রেতা হাবুল সরদারকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। স্থানীয় একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, ওই এলাকায় সংখ্যালঘু পরিবারের ধোপা বাড়ির লোকজন প্রভাবশালী ও স্থানীয় ভূমিদস্যুদের হাতে জিম্মি হয়ে পরেছে। ফলে তারা তাদের বিরুদ্ধে ভয়ে টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করতে পারেনা।
এসআই হাবিবুর রহমান জানান, ভিকটিম দেবাশিষকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে সালিশ বৈঠকে ২ হাজার টাকা জরিমানা দেয়ার কথা স্বীকার করেছে। বিএনপি নেতা সবুজ মেম্বর তার হাতে জরিমানার দু’হাজার টাকা থানায় বসে ফেরৎ দিয়েছে। তবে নাকে খত দেয়া বা থুথু চাটার কথা দেবাশিষ অস্বীকার করে বলেছে, তাকে দিয়ে থুথু ফেলানো হয়েছিল।
এব্যাপারে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, বাদীপক্ষের কোন অভিযোগ না থাকায় সালিশদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়নি।