কাদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সৎ ভাই মারা গেছেন, সেই রহস্যের তদন্ত শুরু করেছে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ।
সোমবার কিম জং ন্যাম কুয়ালালামপুরের বিমানবন্দরে এই বিষক্রিয়ার শিকার হন বলে দাবি করা হচ্ছে। মালয়েশিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, এ ঘটনার জন্য তারা সন্দেহভাজনদের খুঁজছেন।
এ ঘটনায় কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে ভিয়েতনামী পাসপোর্টধারী এক মহিলাকে আটক করা হয়েছে।
মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে বিস্তারিত কোন তথ্য প্রকাশ করছে না। মৃতদেহের ময়না তদন্তের কাজ চলছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হোয়াং কিও আহন বলেছেন, যদি প্রমাণ হয় যে এই ঘটনার পেছনে আসলে উত্তর কোরিয়াই আছে, তাতে দেশটির শাসকগোষ্ঠী যে কতটা ‘নিষ্ঠুর এবং অমানবিক’ সেটাই প্রকাশিত হবে।
মালয়েশিয়া অবশ্য এখনো পর্যন্ত সরকারিভাবে কিম জং ন্যামের মৃত্যুর কথাই নিশ্চিত করেনি। কারণ ঘটনার সময় তিনি ‘কিম চল’ ছদ্মনামে ভ্রমণ করছিলেন।
তবে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার বলছে, তারা নিশ্চিত মৃত ব্যক্তি কিম জং ন্যাম। দক্ষিণ কোরিয়ার গুপ্তচর সংস্থা বলছে, কিম জং ন্যামকে বিষ প্রয়োগেই হত্যা করা হয়েছে বলে তাদের ধারণা।
২০১৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার বর্তমান শাসক কিম জং উনের চাচা চ্যাং সং থায়েককে মৃত্যুদন্ড দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল।
কুয়ালালামপুরের ঘটনার ব্যাপারে উত্তর কোরিয়ার সরকার এখনো কোন মন্তব্য করেনি। তবে যে হাসপাতালে কিম জং ন্যামের মৃতদেহ রাখা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় তাদের দূতাবাসের কর্মকর্তারা সেই হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন।
যেভাবে হামলা হয়েছে
সোমবার কুয়ালালামপুর থেকে ম্যাকাওগামী ফ্লাইট ধরার জন্য বিমানবন্দরে আসেন কিম জং ন্যাম। সেদিন তিনি এই হামলার শিকার হন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর খবর ফাঁস হয় মঙ্গলবার।
ঠিক কিভাবে তার ওপর হামলা চালানো হয় তা পরিষ্কার নয়। কোন কোন খবরে বলা হয়, তার ওপর বিষ স্প্রে করে দেয়া হয়। কোন খবরে বলা হচ্ছে, তার মুখের ওপর বিষ মাখানো কাপড় চেপে ধরা হয়েছিল। বিষাক্ত সূঁচ ফুটিয়ে দেয়ার খবরও বেরিয়েছে।
ঘটনার পর হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান।
দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দাবি করা হচ্ছিল যে দুজন মহিলাকে কিম জং ন্যামের পাশে দেখা যাচ্ছিল, ঘটনার পর যারা ট্যাক্সিতে পালিয়ে যায়।
মালয়েশিয়ার পুলিশ সিকিউরিটি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখছে।
কিম জং ন্যাম উত্তর কোরিয়ার প্রয়াত নেতা কিম জং ইলের বড় ছেলে। ২০১১ সালে কিম জং ইলের মৃত্যুর পর তিনিই পরবর্তী নেতা হবেন বলে আশা করেছিলেন।
কিন্তু তাকে পাশ কাটিয়ে ক্ষমতায় বসানো হয় তাঁর ছোট সৎ ভাই কিম জং উনকে। তখন থেকেই দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয়।
কিম জং ন্যাম বেশিরভাগ সময় চীন, সিঙ্গাপুর এবং ম্যাকাওতে থাকতেন।
২০১২ সালে তিনি উত্তর কোরিয়ায় তাদের পরিবারের বংশানুক্রমিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খোলেন। একটি বইতে তাঁকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, তাঁর ছোট ভাইয়ের নেতা হওয়ার মতো যোগ্যতা নেই।
তবে একই সঙ্গে তিনি এমন দাবিও করেছিলেন, তাঁর নিজের নেতা হওয়ার কোন ইচ্ছে নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সূত্রগুলো মনে করে, কিম জং ন্যামকে উত্তর কোরিয়ার গুপ্তচররা বিষ প্রয়োগে হত্যা করেছে।
এর আগেও অবশ্য তাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে বলে শোনা যায়। ২০১২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় একজন উত্তর কোরিয় গুপ্তচরকে সাজা দেয়া হয় এ ধরণের অভিযোগে। ঐ গুপ্তচর স্বীকার করেছিল যে কিম জং ন্যামের ওপর গাড়ি তুলে দিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করছিল সে।