বিশেষ প্রতিনিধিঃ- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজ বিশ্বে এগিয়ে যাওয়া পাঁচটি দেশের একটি বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। আমার প্রত্যাশা, ২০২১ সালের আগেই আমরা বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে সক্ষম হব।’ বুধবার সকালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ প্রতিটি সেক্টরে এগিয়ে যাচ্ছে। গত চার দশকে বিভিন্ন সূচকে আমরা প্রতিবেশী অনেক দেশ, এমনকি ভারতকেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছাড়িয়ে গেছি। পাকিস্তান সকল সূচকে আমাদের থেকে অনেক পেছনে। আজ আমাদের মাথাপিছু আয় এক হাজার ৩১৪ মার্কিন ডলার। পাঁচ কোটি মানুষ মধ্যম আয়ের স্তরে উন্নীত হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ২২.৪ শতাংশে নেমে এসেছে। আমাদের রিজার্ভ বেড়েছে। রপ্তানি বেড়েছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থান বেড়েছে বহুগুণে। আমাদের গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ বছর সাত মাসে।’
নৌবাহিনীর আধুনিকায়ন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুটি সাবমেরিন সংযোজনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে নৌবাহিনীতে সংযোজিত হবে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীতে পরিণত হবে। তা ছাড়া পটুয়াখালীর রাবনাবাদ এলাকায় এভিয়েশন সুবিধা-সংবলিত নৌবাহিনীর সর্ববৃহৎ নৌঘাঁটির কার্যপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
কমিশন লাভকারী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ আপনাদের জন্য একটি বিশেষ আনন্দের দিন। আজকের এই কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে যাঁরা কমিশন লাভ করতে যাচ্ছেন তাঁদের আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। বিশেষ করে তিনজন মহিলা ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার এবং ছয়জন মহিলা মিডশিপম্যান অফিসার কমিশন পেতে যাচ্ছেন, তাঁদেরকেও আমার আন্তরিক অভিনন্দন। আমি আশা করি, আপনাদের এ সাফল্য দেশ প্রতিরক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে সমুদ্রসীমাসংক্রান্ত আইনি লড়াইয়ে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বিজয়ী হয়ে গভীর সমুদ্রে এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বিপুল জলসম্পদের মালিকানা অর্জন করেছি। এ ছাড়া আমাদের রয়েছে ৭২০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূল এলাকা, যেখানে প্রায় তিন কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহের জন্য সমুদ্রের ওপর নির্ভরশীল।’ তিনি বলেন, ‘বহির্বিশ্বের সঙ্গে দেশের বাণিজ্যের ৯০ শতাংশেরও বেশি সমুদ্রপথেই পরিচালিত হয়ে থাকে। আমাদের অর্জিত এই বিশাল সামুদ্রিক এলাকায় সমুদ্রপথে বাণিজ্য পরিচালনা ছাড়াও আছে মত্স্য, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও অন্যান্য মূল্যবান পদার্থ। এই সম্পদ রক্ষা ও সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা বিধানের পবিত্র দায়িত্ব এখন আপনাদের ওপর। এই দায়িত্ব পালনে আপনারা সর্বোতভাবে সফল হবেন—এই প্রত্যাশা করছি।’
এর আগে শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে যোগ দিতে সকাল পৌনে ১১টার দিকে হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রামে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী চিটাগাং ড্রাই ডক লিমিটেড বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আজ দেশের জাহাজ মেরামত শিল্পের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে আজ চিটাগাং ড্রাই ডক লিমিটেড হস্তান্তর করা হচ্ছে। নৌবাহিনীর ক্রমাগত অগ্রযাত্রায় এটি আরেকটি মাইলফলক। আমার প্রত্যাশা চিটাগাং ড্রাই ডক লিমিটেডকে একটি সর্বাধুনিক ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী তার সফলতার স্বাক্ষর রাখবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা ফোর্সেস গোল ২০৩০ অনুযায়ী সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর উন্নয়ন করে যাচ্ছি। নৌবাহিনীতে সংযোজন করা হয়েছে অত্যাধুনিক সার্ভে জাহাজ ‘বানৌজা অনুসন্ধান’। মেরিটাইম হেলিকপ্টার ও মেরিটাইম পেট্রল এয়ারক্রাফটের সংযোজন নৌবাহিনীতে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে।”
প্রায় পাঁচ ঘণ্টার চট্টগ্রাম সফর শেষে ড্রাই ডক ইয়ার্ড থেকেই হেলিকপ্টারে করে ঢাকার উদ্দেশে চট্টগ্রাম ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী।