কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ- কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা সীমান্তের ৯৪৭/৩ এস আন্তর্জাতিক পিলার সংলগ্ন ভারতের খেতাবেরকুটি গ্রামে বিএসএফের হাতে ফেলানী হত্যার পঞ্চম বর্ষপূর্তি বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারি।
২০১১ সালের এই দিনে কিশোরী ফেলানী বিয়ের পিঁড়িতে বসার জন্যে আসাম রাজ্যের বনগাইগাঁও এলাকা থেকে বাড়ি ফিরছিল। পথে ভারতের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফ তাকে পাশবিক নির্যাতন ও নির্মমভাবে হত্যা করে। বিএসএফ সদস্যরা তাকে নির্যাতন শেষে পাখি শিকারের মত গুলি চালিয়ে হত্যা করে। এরপর ফেলানীর লাশ ঝুলিয়ে রাখে কাঁটাতারের বেড়ায়।
৯ জানুয়ারি দুইদিন পর তার লাশ ফেরত দেয় বিএসএফ। এ খবরটি পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে রিপোর্ট প্রকাশসহ দেশি-বিদেশী মিডিয়ায় ফলাও হলে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষে মিছিল মিটিং ও মানববন্ধন করা হয়। ফেলানীর বাড়ী কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের দক্ষিণ রামখানা কলোনীটারী গ্রামে দাফনের পর কবর দেখতে ও তার পরিবারকে সান্ত্বনা আসেন বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্থানীয় সাংসদসহ সরকারী-বেসরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের নেতারা।
ফেলানী হত্যার পাঁচ বছর অতিবাহিত হলেও ফেলানীর পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি এখনও অপূরণীয় রয়েছে। ফেলানীর পরিবারকে দেয়া তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী এমপিদের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নের মুখ এখনও দেখা যাচ্ছেনা। ভারতে বিএসএফের বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার কার্যক্রমের দফায় দফায় শুনানি হলেও এখনও অভিযুক্ত বিএসএফের শাস্তি দেখছেনা ফেলানীর পরিবার।
এছাড়া ভারত সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ, ফেলানীর কবর পাকা করণ, ফেলানীর বাড়ীর সামনের প্রায় আড়াই কি.মি কাঁচা রাস্তা পাকা করণ ও রাস্তাটির ফেলানী সড়ক নাম করণ, তার বাড়ীর পাশের কলোনীটারী মসজিদটিকে পাকা করণের দাবির বাস্তবায়ন পায়নি ফেলানীর পরিবার ও এলাকাবাসী। এ সব দাবীর দ্রুত বাস্তবায়ন চান ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম, মা জাহানারা বেগমসহ এলাকাবাসী।
২০১৩ সালের ১৩ অগাস্ট কোচবিহার জেলার বিএসএফের ১৮১ সদর দপ্তরে স্থাপিত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে আসাম ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি সিপি ত্রিবেদীর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের বিচারক বেঞ্চে কঠোর গোপনীয়তায় ফেলানী হত্যার বিচারকার্য শুরু হয়। ৫ সেপ্টেম্বর এ আদালত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করে। রায় প্রত্যাখ্যান করে ১১ সেপ্টেম্বর ফেলানীর বাবা ভারতীয় হাই কমিশনের মাধ্যমে সে দেশের সরকারকে ন্যায় বিচারের আশায় পত্র দেন।
২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনরায় বিচার কার্যক্রম শুরু হয়ে বারবার স্থগিতের পর ২০১৫ সালের ২ জুলাই বিএসএফের জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্ট আগের রায় বহাল রাখে।
এরপর ৬ আগস্ট বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিজিবি জানায় ভারতের নয়া দিল্লিতে সীমান্ত সম্মেলনের বৈঠকে ফেলানী ইস্যুতে বিএসএফ মহাপরিচালক ডিকে পাঠক নিম্ন আদালতের দেয়া রায় তিনি অনুমোদন করেননি বলে জানান। যদি ফেলানীর পরিবার এ রায়ে সংক্ষুব্ধ হয় এবং বিএসএফকে অবহিত করে তাহলে বিএসএফ নতুন ভাবে আদালত গঠন করে নতুন বিচারকদের সমন্বয়ে বিচার করবে।
ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম বলেন, ‘সরকার ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আগের মত সহায়তা পেলে আমি আমার মেয়ে হত্যার ন্যায় বিচার পেতে এবছরেও আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। আশা করছি তাদের সহায়তায় ন্যায় বিচার পাব।’
ফেলানী হত্যা মামলার বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য মানবাধিকার কর্মী, কুড়িগ্রাম জেলা জর্জ কোর্ট পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘মানবাধিকারের প্রশ্নে ন্যায় বিচারের পক্ষে উভয় রাষ্ট্রের নাগরিকদের কাম্য এবং ফেলানীর পরিবারেরও চাওয়া ন্যায় বিচার। পূর্বে আদালতের যে ফলাফল দেয়া হয়েছে তা কেউ ন্যায় বিচার অংশ বলে মনে করেননা তাই সুপ্রিম কোর্টও ন্যায় বিচারের জন্যে পরবর্তী আবেদনটি গ্রহণ করেছে। আশা করি নতুন বছরেই এর সমাধান হবে।’