জাকির হোসেন সিকদারঃ ঝালকাঠি জেলার অন্তর্গত রাজাপুর উপজেলা সৃষ্টির ইতিহাস -সহঃকারী সম্পাদক দৈনিক সংবাদ মোহনা এর সাংবাদিক জাকির সিকদার নিয়ে এল এই সেই রাজাপুর । কথিত আছে,১৯২০ সালে রেজা খান এ অঞ্চলে প্রধান কার্যালয় স্থাপন করেন। গৌর সুলতানের আমলে চন্দ্রদ্বীপের দক্ষিন অঞ্চল দুই পাঠান সরদার শাসন করতেন। তাদের একজনের নাম ছিল রেজা খান, রেজা খান এ অঞ্চলের প্রধান ছিলেন বলে জানাগেছে। তার নামানুসারে এ স্থানের নাম রাখা হয় রয়েজাপুর মানেই পরবর্তীতে রয়েজাপুর কে রাজাপুর নাম করন করেন।এই রাজাপুর উপজেলার একমাত্র থানাকে ১৯৩৭ সনে স্থাপিত হয়। ১৯৮৩সনে রাজাপুরে উন্নীত থানা এই সেই রাজাপুর হিসাবে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু করে এবংরাজাপুর উপজেলায় উন্নীত হয় ১৯৮৫ সনে।রাজাপুর উপজেলা আয়তনঃ ১৬৪.৩৩ বর্গ কিমি।অবস্থানঃ ২২°২৯´ থেকে ২২°৩৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০৩´ থেকে ৯০°১৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানাঃ উত্তরে ঝালকাঠি সদর ও কাউখালী (পিরোজপুর) উপজেলা, দক্ষিণে ভান্ডারিয়া, কাঁঠালিয়া ও বেতাগী উপজেলা, পূর্বে নলছিটি ও বাকেরগঞ্জ উপজেলা এবং গজালিয়া নদী, পশ্চিমে ভান্ডারিয়া ও কাউখালী উপজেলাজনসংখ্যাঃ ১৪৯৩৩২; পুরুষ ৭৪০৭২, মহিলা ৭৫২৬০। মুসলিম ১৩৯৯৩৭, হিন্দু ৯৩৬৭, বৌদ্ধ ২, খ্রিস্টান ১৯ এবং অন্যান্য ৭।জলাশয়ঃ গজালিয়া, জঙ্গলিয়া, বিশখালী, নালবুনিয়া ও ধানসিঁড়ি নদী এবং রাজাপুর খাল উল্লেখযোগ্য।
উপজেলার গুরুত্বপূর্নই তথ্যঃ
ইউনিয়নঃ ০৬ টি
মৌজাঃ ৭২ টি
গ্রাম ঃ৭৫ টি
জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)ঃ ১৩৯৫
শিক্ষার হার (%) ঃ ৭৪.০১%
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলিঃ
১৯৭১ সালের ২১ অক্টোবর বীর উত্তম শাহজাহান ওমর বরিশালের ৯ নং সেক্টর কমান্ডার হিসাবে হেমেয়েত বাহিনী গঠন করেই ২৭ নভেম্বর এ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়।আংগারিয়ারআলতাফ রাড়ি নান্নু আলগী আশ্রাফ খলিফা,রাজাপুরের জলিল সিকদার,খালেক সিকদার,সত্তার সিকদার সহ ঝালাকাঠির রাজাপুর কাঠালিয়া,নলছিটিতে মুক্তিযোদ্ধারা মরন উপজেলা রাজাপুরের কানুদাসকাঠিতে বোর্ড স্কুলের সামনে এক ঘাটিতে প্রাঙ্গনে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ৮ জন পাকসেনা নিহত হয়। ২৭ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা রাজাপুর উপজেলা অক্রমণ করে। ২৭ নভেম্বর এ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানঃ মসজিদ- ৪৪১, মন্দির-৫৪, ঈদগাহ -২১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: সুরিচোড়া জামে মসজিদ।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৭৪.০১%; পুরুষ ৭৬.৬%, মহিলা ৭৩.৬%। কলেজ ৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫৫, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৬, কমিউনিটি স্কুল ১৪, মাদ্রাসা ১০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: রাজাপুর ডিগ্রি কলেজ, রাজাপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৬), আফাজউদ্দিন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সাতুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গালুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নিজামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, করিমননেছা বালিকা বিদ্যালয়, রাজাপুর ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৪০)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকীঃ ধাঁনসিড়ি সাহিত্য সৈকত (১৯৯২)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানঃ লাইব্রেরি- ৩২, ক্লাব-৬৭, মহিলা সমিতি ১, এতিমখানা-২০, কল্যাণ সংগঠন- ৬৭, সাংস্কৃতিক দল- ২, কমিউনিটি সেন্টার- ১, সিনেমা হল -১, খেলার মাঠ- ১০।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎসঃ কৃষি- ৫২.৩৭%, অকৃষি শ্রমিক- ৪.৯৮%, শিল্প- ০.৮৪%, ব্যবসা- ১৪.৩৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ- ২.৬৩%, চাকরি -১৩.৪%, নির্মাণ- ২.০৩%, ধর্মীয় সেবা -০.৪২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স- ২.৪২% এবং অন্যান্য- ৬.৫৩%।
কৃষিভূমির মালিকানাঃ ভূমিমালিক ৭২%, ভূমিহীন ২৮%। শহরে ৬৪.৯২% এবং গ্রামে ৭২.৬৭% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসলঃ ধান, গম, ডাল, পান, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি সরিষা, তিল, আখ, মিষ্টি আলু।
প্রধান ফল-ফলাদিঃ সুপারি, কলা, আমড়া, নারিকেল, কাঁঠাল, আম, লিচু।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামারঃ মৎস্য ৫, গবাদিপশু ১, হাঁস-মুরগি ৩০।
যোগাযোগ বিশেষত্বঃ পাকারাস্তা ৩৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৫৪ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৮২ কিমি; নৌপথ ৭ নটিক্যাল মাইল।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায়ঃ সনাতন বাহন পাল্কি।
শিল্প ও কলকারখানা রাইসমিলঃ বিড়ি ফ্যাক্টরি, ওয়েল্ডিং কারখানা।
কুটিরশিল্পঃ তাঁতশিল্প, বাঁশের কাজ, সেলাই কাজ।
হাটবাজার ও মেলাঃ হাটবাজার ৩৫, মেলা ৭। লেবুবুনিয়ার হাট, বলারজোর হাট, চড়খালি হাট, বাঘড়ী হাট, উত্তমপুর হাট ও বাদুরতলার হাট উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্যঃ কলা, নারিকেল, পান, সুপারি।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৭.৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯২.৯৫%, পুকুর ৫.৪৯%, ট্যাপ ০.১২% এবং অন্যান্য ১.৪৪%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭১.৪৩% (গ্রামে ৬৯.৮৫% ও শহরে ৮৮.১১%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৫.৩১% (গ্রামে ২৭.১৩% ও শহরে ৬.০৮%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩.২৬% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৫, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, কমিউনিটি ক্লিনিক ১৬।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ উপজেলায় ১৭৮৬ সালের বন্যা, ১৮২২, ১৯০৯ ও ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে অনেক মানুষ প্রাণ হারায় এবং ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।