নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশের ইউএস বাংলা বিমানটি কেন বিধ্বস্ত হয়েছিল সেটি বলার সময় এখন আসেনি বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
নেপালের কাঠমান্ডু পোস্ট পত্রিকা এবং আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি দাবি করেছে বিমান দুর্ঘটনা তদন্তের একটি খসড়া রিপোর্ট তাদের হাতে এসেছে।
এ দুটি সংবাদ মাধ্যম লিখেছে যে তদন্ত রিপোর্টে বিমান দুর্ঘটনার জন্য পাইলট আবিদ সুলতানের আচরণকে দায়ী করা হয়েছে।
এ দুর্ঘটনার পর নেপাল কর্তৃপক্ষ অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন কমিশন গঠন করেছে।
সে কমিশনের সদস্য বাংলাদেশের সালাউদ্দিন এম রহমতউল্লাহ, যিনি বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন অথরিটির এয়ারক্রাফট অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন গ্রুপ- এর প্রধান।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বিমানের পাইলট আবিদ সুলতানকে যেভাবে দায়ী করা হয়েছে সেটিকে ‘ভিত্তিহীন’ হিসেবে উল্লেখ করে মি: রহমতউল্লাহ বলেন, ইউএস বাংলা বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
কমিশন এখনো পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন কমিশনে ট্রান্সপোর্ট সেফটি বোর্ড অব কানাডা এবং ব্রিটেনের সদস্যও রয়েছে বলে তিনি জানান।
মি: রহমতউল্লাহ বলেন, ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন-এর নিয়ম অনুসারে তদন্তকারীদের অনুমোদন ছাড়া বিমান দুর্ঘটনার কোন বিষয় জনসম্মুখে প্রকাশ করা যাবে না। তদন্তকারীরা যতটুকু প্রকাশ করা সংগত মনে করবেন, শুধু ততটুকু প্রকাশ করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, “বিমান দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আমরা শুধু কারণ বের করি। কেন দুর্ঘটনা ঘটলো? তারপর সে অনুযায়ী সুপারিশ করা হয়।”
তদন্ত শেষ হবার পর সেটির প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাছে পাঠানো হবে তাদের মতামত দেবার জন্য।
ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশনের নিয়ম অনুযায়ী যে কোন বিমান দুর্ঘটনার ৩০ দিনের মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট দিতে হয়।
এরপর ৩৬৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তদন্তের জন্য যদি আরো সময়ের প্রয়োজন হয়, তাহলে সে সময় নেয়া যেতে পারে।
মি: সালাউদ্দিন বলেন, বিমান দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে তদন্তকারীরা উদ্দেশ্যমূলক-ভাবে কোন তথ্য গোপন করেন না।
সে সুযোগ ও তাদের নেই। কারণ একটি তদন্তের সাথে অনেকগুলো পক্ষ জড়িত থাকে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিমান দুর্ঘটনার তদন্তের ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তির নাম প্রকাশ করা হয়না।
এদিকে ইউএস বাংলা বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত নিয়ে নেপালের একটি ইংরেজি দৈনিক কাঠমান্ডু পোস্ট যে প্রতিবেদন করেছে সেটিকে ‘অনৈতিক এবং প্রতারণামূলক’ হিসেবে বর্ণনা করেছে নেপালের তদন্তকারী দল।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তারা জানিয়েছে এ দুর্ঘটনার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি।
রিপোর্টে দাবি করা হচ্ছে ইউএস-বাংলার ঐ ফ্লাইটের পাইলট সেদিন “বেশ আবেগতাড়িত ও মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন এবং কাঁদছিলেন।”
তিনি সেদিন বিমানের ককপিটে দায়িত্বরত অবস্থায় ধূমপানও করছিলেন বলে এতে উল্লেখ করা হয়।
নেপালের তদন্তকারী দল সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে, তদন্তাধীন ম্পর্শকাতর একটি বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যাচাই না করে এ ধরণের সংবাদ প্রচার ‘কলঙ্কজনক’ বিষয়।
তদন্ত শেষ হলে আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের নিয়ম অনুযায়ী সে প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে।
বিমান দূর্ঘটনার তদন্ত সংবাদ মাধ্যমে প্রোপাগান্ডার কোন বিষয় নয় বলে উল্লেখ করেছে নেপালের তদন্ত দল।
সূত্র, বিবিসি