ব্যাপকভাবে দূষণের কারণে শীতলক্ষ্যা নদীর পানিতে জলজ জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, তাই নদীটির মৎস সম্পদ এখন বিপন্ন প্রায়। ফলে সঙ্কটে পড়েছে এখানকার জেলে সম্প্রদায়। শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপাড়ে একরামপুর জেলেপাড়ার দীনেশ বর্মণ বিবিসি বাংলার শায়লা রুখসানাকে বলছিলেন, পূর্বপুরুষের পেশা টিকিয়ে রাখাই এখন এক সংগ্রাম।
আমি দীনেশ বর্মণ। বংশাণুক্রমিকভাবে আমরা জেলে সম্প্রদায়।
এখন শীতলক্ষ্যা নদীর যে হাল তাতে আমাদের মরে যাওয়াই ভাল। এখন আমরা খুবই অসুবিধার মধ্যে আছি।
আগে শীতলক্ষ্যায় প্রচুর মাছ ছিল। এই মাছ ধরে, বাজারে বিক্রি করে, আমরা সংসার চালাতাম।
কিন্তু এখন আমরা সংসার চালাতে পারছি না। কারণ শীতলক্ষ্যায় এখন আর মাছ পাই না।
একই কারণে আমরা ছেলেপেলেদের লেখাপড়াও করাতে পারছি না। অসুখ-বিসুখ নিয়েই আছি।
শীতলক্ষ্যার পানি এখন এমনভাবে পচে গিয়েছে যে নদীর ৭/৮ হাত গভীরে মাটির নীচে শামুক পর্যন্ত মরে গিয়েছে।
মাছ পাওয়া তো দূরের কথা। শীতলক্ষ্যা এখন গোসল করারও উপযোগী নেই।
আগে আমাদের বউ-বেটিরা শীতলক্ষ্যা থেকে জল নিয়ে যেত।
সেই জল দিয়ে রান্না-বান্না চলতো। আমরা শীতলক্ষ্যার জল খেতাম। কিন্তু এখন সেটা পারি না।
এমনকি আমার পাড়ায় যে পানির পাম্প আছে, তাও মাস-দুয়েক হলো নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। আমাদের এখন খুবই কষ্ট।
এখন মাছ ধরতে হলে আমাদের ভাটিতে যেতে হয় চাঁদপুরের কাছাকাছি।
কিন্তু সেই নদীতে মাছ ধরার জন্য যত বড় জাল লাগে সেই জাল আমাদের নেই।
একটা জাল তৈরি করতে লাখ লাখ টাকা লাগে। এত টাকা আমরা কোথায় পাব?
একটা নৌকাতে ৪/৫ জন আমরা জেলে কাজ করি।
এই ক`জন মানুষের খরচ, তারপর তেলের খরচ দিয়ে অত দূরে গিয়ে মাছ ধরা পোষায় না।
তাই অনেক কষ্টে আমাদের দিন চলছে।
শীতলক্ষ্যায় আমরা এক সময় সব ধরনের মাছ দেখেছি। আমার বয়স এখন ৬২ বছর।
৭/৮ বছর বয়সে আমার জ্ঞান হওয়ার পরে থেকেই আমি আমার বাপ-দাদাকে দেখেছি তারা প্রচুর মাছ ধরতেন।
বড় মাছ থেকে ইঁচা মাছ – সব ধরনের মাছই তারা ধরতেন।
নদীর গভীরে বড় বড় পাঙ্গাশ পাওয়া যেত। ইলিশ মাছও ছিল শীতলক্ষ্যায়।
এমন কোন মাছ ছিল না যেটা শীতলক্ষ্যায় পাওয়া যেত না।
কিন্তু এখন সেই দিন নেই।
এক সময় শীতলক্ষ্যার জল এতই পরিষ্কার ছিল যে সেই জল খেয়ে বহু মানুষের অসুখ-বিসুখ সারতো।
এখন শীতলক্ষ্যার জল খেলে মানুষের অসুখ করবে।