জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া : রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড দক্ষিণ নোয়াগাঁও ফকিরখীল এলাকায় গোচরা খালের উপর একটি ছোট্ট ব্রীজের অভাবে এদত অঞ্চলের মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। ফকিরখীল, গোচরা বাজার, বাচাশাহ্ নগরের কিছু অংশ ও কাঙ্গালী শাহ্ মাজারের প্রায় ১০ হাজার মানুষ তাদের প্রাত্যহিক কাজে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই খাল পারি দিতে হয়। এরই ভিত্তিতে খালটির উপর স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় ও অর্থায়নে নির্মিত হয় একটি বাঁশের সাঁকো। ফকিরখীলের জেলে, কৃষক, জোটমিলের শ্রমিক, খালের অপর প্রান্তে কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সেবা নিতে যাওয়া মহিলা, স্কুল-কলেজ গামী শিক্ষার্থীসহ সর্বসাধারন প্রতিদিন অত্যন্ত ঝুঁকিতে বাধ্য হয়ে এই ভ্রম্যমান সাঁকো দিয়ে পার হতে হচ্ছে। বর্ষাকালে এই সাঁকোটি ভেঙ্গে গেলে এতদ অঞ্চলের মানুষকে এপার-ওপার যেতে ৫কি.মি দীর্ঘ পথ ঘুরে আসতে হয়। শতবর্ষ পুরাতন এই জনপদের মানুষের তাই দীর্ঘদিনের দাবী এই খালের উপর অচিরেই একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হোক।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, গোচরা হাট ও ফকিরখীল জেলে পাড়ার মাঝখানে সামান্য ৬০ ফুট প্রশস্ত গোচরা খাল। দুই পার একই ওয়ার্ডের অন্তুভুক্ত। যার মধ্যে ফকিরখীল এলাকায় প্রায় ৬ হাজার ও খালের অপর প্রান্তে রয়েছে ৪ হাজার মানুষের বসবাস। এর মধ্যে ফকিরখীল এলাকার কৃষক তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য সময়মতো পার্শ্ববর্তী গোচরা বাজারে নিতে না পারায় ন্যায্য মূল্য হারাচ্ছে। এছাড়াও তাদের কৃষি কাজে প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহে তাদের দীর্ঘ পথ পারি দিতে হয়। অপরদিকে ফকিরখীল এলাকার নিকটবর্তী একমাত্র পোমরা উচ্চ বিদ্যালয়সহ কলেজগামী কোমলমতী শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন এই ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পারি দিতে হয়। অন্যথায় তাদের ঝুঁকি নিয়ে কাপ্তাই সড়ক দিয়ে ৫ মিনিটের পথ ৫ কি.মি. ঘুরে স্কুল-কলেজ যেতে হয়। একই অবস্থা এই এলাকার জুটমিলের শ্রমিক কর্মচারীদেরও। এছাড়াও এলাকার একমাত্র কমিউনিটি ক্লিনিকটি খালের অপর প্রান্তে হওয়ায় প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে স্বাস্থ্য সেবা নিতে যাচ্ছেন এলাকার মহিলারা। তাই দীর্ঘদিনের উৎকন্ঠা কাটছেনা এলাকার শিক্ষার্থী, কর্মচারীসহ এতদ অঞ্চলের সর্বসাধারণের।
ফকিরখীল এলাকার কৃষক চন্দন জলদাশ জানান, তার উৎপাদিত ফসল গোচরা বাজার নিতে সাঁকো দিয়ে যাওয়া যায় না। তাই বাড়তি খরচে ভিন্ন পথ ঘুরে যেতে হয়। এতে তার বাড়তি খরচ ও সময় দুটোই ব্যয় হয়। সময়মতো বাজারে পণ্য নিতে না পারলে ন্যায্য দামও পাওয়া যায় না। খালের অপর প্রান্তের পোমরা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়–য়া অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সচিন দাশ জানায়, ঝুঁকি সত্ত্বেও কম সময়ে স্কুলে যেতে এই সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করে সে। বর্ষাকালে পানি বাড়ার কারণে এই সাঁকো ভেঙ্গে গেলে দীর্ঘ পথ পারি দিয়ে কাপ্তাই সড়ক দিয়ে ঘুরে তাদের কাছের এই স্কুরে যেতে হয়। এলাকার কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী নয়ন চক্রবর্তী জানায়, তাকে কলেজ যেতে ঝুঁকি নিয়ে এই সাঁকো পার হয়ে প্রতিদিন যেতে হয়। এলাকার সমাজসেবী ও ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আবদুস সবুর জানায়, দীর্ঘদিন আগে এই খালের উপর একটি সুইস গেট নির্মাণের অনুমোদন হলেও অজ্ঞাত কারণে তা আর হয়নি। তাই এলাকার সর্বসাধারনের দীর্ঘদিনে চাওয়া আর পূরণ হলো না। এলাকার একমাত্র গ্রাম ডাক্তার হরিভাগ্য দাশ জানায়, রাতবিরাতে রোগী বাড়ি থেকে ফোন করলে তীব্র ঝুঁকিতে খাল পার হয়ে যেতে হয়। এই প্রতিবেদকের কাছে স্থানীয় কাউয়ালী গান শিল্পী উত্তর কুমার ও বয়োজেষ্ট শৈলস্বর দাশ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচন আসলে ব্রীজ নির্মাণে নানা প্রতিশ্রুতির দিয়ে ভোট নিয়ে যায়। কিন্তু জনপ্রতিনিধি আসে যায়, তাদের ব্রীজ নির্মাণ হয় না। খালের উপর দ্রুত ব্রীজ নির্মাণের দাবী জানিয়ে এলাকার প্রবাসী মো. নুরুন্নবী জানায়, তার ২ ছেলেমেয়ে দীর্ঘ পথের গাড়ির রাস্তা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে না গিয়ে স্বল্প সময়ের পথ এই ব্রিজ পার হয়ে বিদ্যালয়ে যায়। কিন্তু তার উৎকন্ঠা কাটে না। এই বুঝি কোন দূর্ঘটনার মধ্যে পরলো তার আদরের সন্তান।
ফকিরখীল ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল আবছার জসিম জানায়, অত্র এলাকার মানুষের গোচরা খালের উপর ব্রীজ নির্মানের দাবী দীর্ঘদিনের। তিনি ভোগান্তির কথা স্বীকার করে বলেন, আধুনিক রাঙ্গুনিয়ার রূপকার ড. হাছান মাহমুদের হাত ধরে এই এলাকায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন হলেও এই একটিমাত্র সাঁকোর অভাবে অনেকেই তার সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি ব্রীজ নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেছেন বলে জানায়।
রাঙ্গুনিয়ার পৌরসভার মেয়র শাহজাহান সিকদার জানায়, ফকীরখীলের মানুষের দাবীকৃত ব্রীজের কথা শুনেছি। অচিরেই ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোটির পরিবর্তে একটি ব্রীজ নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।