জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া : রাঙ্গুনিয়ায় চলমান বর্ষা ও কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পানি ছেড়ে দেওয়ার পর থেকে ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। কর্ণফুলী, ইছামতী নদী সহ বিভিন্ন শাখা খালের ভাঙ্গনে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ইউনিয়নের কয়েক হাজার খেটে খাওয়া মানুষের ফসলি জমি, বসতবাড়ী, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ সহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী গর্বে বিলিন হয়ে গেছে। অতিস্বত্ত্বর ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্লক স্থাপন করা না হলে চলমান বর্ষায় রাঙ্গুনিয়ায় অর্ধলক্ষাধিক পরিবার নদী ভাঙ্গনের সম্মুখিন হবেন। তবে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে রাঙ্গুনিয়ায় ৪’শ কোটি টাকার বরাদ্দ হয়েছে বলে জানান স্থানীয় সাংসদ ড. হাছান মাহমুদ। স্থানীয়দের দাবী নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে বরাদ্দকৃত প্রজেক্ট অতিস্বত্ত্বর বাস্তবায়ন করা হোক।
কোদালা ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতা মো. ইকবাল হোসেন জানান, ভয়াবহ নদী ভাঙ্গনে কবলে পড়েছেন কোদালা ইউনিয়নের ধোপাঘাট এলাকাবাসী। ইতিমধ্যেই নদী ভাঙ্গনে কোদালা ধোপাঘাট নয়া খালের পশ্চিম কুল হত ব্রিক ফিল্ড পর্যন্ত প্রায় ৫০০ বাড়ী নদী গর্বে বিলীন হয়ে গেছে। এখানকার ৫ হাজার খেটে খাওয়া মানুষের ফসলি জমি, বসতবাড়ী, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ সহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী গর্বে বিলিন হয়ে গেছে। এছাড়াও ঝুঁকির মুখে রয়েছে কোদালা পুলিশ বিট এবং বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। এলাকাবাসী প্রায় ২ বছর আগে স্থানীয় এমপি বরাবর আবেদন করলেও এখনোও পর্যন্ত ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্লক ঢালাই এর কাজ শুরু না হওয়ায় এলাকাবাসী হতাশ হয়ে পড়েছেন।
কোদালা ইউনিয়ন আ’লীগ সাধারন সম্পাদক বদিউল আলম মাস্টার জানান, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং মাননীয় এমপি মহোদয় এর নিকট আবেদন করা হয়েছে।’ তিনি অনতিবিলম্বে কোদালা নয়াখাল হতে ডংখালের মুখ পর্যন্ত ব্লক দিয়ে ভাঙ্গন প্রতিরোধ করার জন্য জোর দাবি জানান।
ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড আ’লীগ সাধারন সম্পাদক অনুপম চক্রবর্তী জানান, ‘দ্রুত নদীর পাশে ব্লক নির্মান করে নদী গর্ভে বিলিন হতে এই এলাকাকে রক্ষা করা এখন অনেক জরুরী। বাস্তবিক অর্থে ইতিমধ্যে কোদালা চা বাগান সহ অনেক ঘর বাড়ী ফি বছর নদী গর্ভে বিলীন হলে নিজেদের অস্তিত্ব ঠিকে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে বিধায় নদী ভাঙ্গনরোধে জরুরী ভিত্তিতে ধোপাঘাট খালের পশ্চিম পাশ হতে ডংখালের মুখ পর্যস্ত ব্লক নির্মাণ করা খুবই প্রয়োজন।’ তিনি এলকাবাসীর দু:খ লাগবের জন্য কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
কোদালা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম তালুকদার জানান, ‘নদী ভাঙ্গনের কারণে এলাকাবাসীর আহাজারি দিন দিন বেড়েই চলেছে। শুধু ধোপাঘাট নয় পুরা কোদালা কর্ণফুলীর ভাঙ্গন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। হুমকির মধ্যে পড়েছে ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ কোদালা বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ মসজিদ মাদ্রাসা ও সাধারণ মানুষের হাজার হাজার ঘর-বাড়ি।’
এভাবে ইছামতী নদীর ভাঙ্গনে রাজানগর ইউনিয়নের ভরণছড়ি, দক্ষিণ রাজানগর, পারুয়া, পৌরসভার উত্তর ঘাটচেকের সোনাইছড়ি ও ইছাখালী ভাঙ্গনে পারুয়া ডিসি সড়ক সংলগ্ন এলাকা, দক্ষিণ ঘাটচেক, খাটাখালী খালের ভাঙ্গনে খাটাখালী ও মরিয়মনগর এলাকার, কর্ণফুলী ভাঙ্গনে সরফভাটা মাওলানা গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা, শিলক, পদুয়া, বেতাগী, চন্দ্রঘোনাসহ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার প্রায় অর্ধলক্ষাধিক পরিবার নদী ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব এলাকার মানুষরা জানান, কয়েকদিন আগে পাহাড়ি ঢলের বন্যায় একরাতে কয়েক শতাধিক পরিবার নদী গর্বে বিধস্ত হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর আরো কয়েক শত ঘর ভাঙ্গনের কবলে পড়ে। বর্তমানে একদিকে বৃষ্টি অন্যদিকে কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পানি ছাড়ার ফলে নদীতে বাড়তি পানি জোয়ারের প্রভাবে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। পানি কমে আসলে শুরু হয় তীব্র ভাঙ্গন। এসব এলাকার জনসাধারণ অতিস্বত্তর ভাঙ্গন প্রতিরোধে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
স্থানীয় এমপি সাবেক মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানান, ‘ নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে রাঙ্গুনিয়ায় ৪’শ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ভাঙ্গন প্রতিরোধে অতিসত্বর ব্লক স্থাপনের কাজ শুরু হবে।’