আ,হ,জুবেদ, সম্পাদকঃ অনেক স্বাভাবিক- অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর লিখেছি, বহু মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা নিয়ে ভেবেছি, অগণিত মমতাময়ী মা-বাবার বিয়োগ হতে দেখেছি,শুনেছি।
কিন্ত আজ অবর্ণনীয় মমতাময়ী, জনম দুখিনী এক মায়ের মৃত্যুর খবর লিখতে গিয়ে অনবরত হাতটি তরতর করে কাঁপছে, হৃদয়ে অজস্র কান্নার ঝড় বয়ে যাচ্ছে, গোটা পৃথিবীটাই অন্ধকারাচ্ছন্ন মনে হচ্ছে।
একের পর এক নিজ স্বজন হারানোর সীমাহীন মর্ম বেদনা, বুকভরা শত দুঃখ-কষ্টে এখন দিশেহারা প্রায়।
কী আর হারানোর বাকি এই জীবনে, কতো আর হারাতে হবে এক জীবনে, এমনই শত শত অনুত্তরিত প্রশ্ন আমাকে প্রায় বিচলিত করে তুলেছে।
নানা রঙের এই জীবনে বহু ক্ষেত্রে এপর্যন্ত যতটুকু অর্জনই ধাপেধাপে এসেছে; সে তুলনায় হারানোর কঠিন কষ্ট সীমাহীন।
যদিও জানি জীবন যেখানে আছে, হারানোর কষ্ট সেখানে থাকবেই, কিন্ত যে মূল্যবান সম্পদ একবার হারানোর পর আর ফিরিয়ে পাবার সম্ভাবনা একেবারেই নেই, অগণিত অর্থ ব্যয় করে কিংবা গোটা পৃথিবীর চতুর্দিক তন্নতন্ন করে খুঁজেও এমন হারানো সম্পদ পাওয়া যাবেনা।
সেই বিশাল অমূল্য সম্পদের নাম হচ্ছে ‘মা’ । এ জন্যই বোধ হয় কবি বলেছিলেন, মা নাই গৃহে যার, সংসার অরণ্য তার, দেখিলে মায়ের মুখ, মুছে যায় সব দুঃখ।
মমতাময়ী মাকে হারিয়েছি প্রায় ৭ বছর আগে, আজও মাকে খুব মনে পড়ে। যাদের মা নেই, তাদের পৃথিবী সত্যি সত্যি অন্যরকম। যাদের মা আছে সেই কষ্ট তারা বুঝতে ঠিক পারবে না। বোঝানো সম্ভবও নয়।
জীবনের সকল দুঃখ-আনন্দ একসাথে যাকে বলা যেতো, সে ছিল আমার মা। মায়ের চেয়ে বড় বন্ধু পৃথিবীতে নাই। যারা মা হারিয়েছে তাদের চেয়ে অভাগা আর কে হতে পারে! ২০০৯ সালে আমি মাকে হারাই।
মাকে হারানোর সেই বেদনা আজো সমান ভাবে বুকের গহীনে বাজে। নিরন্তর সেই বোবা কষ্ট আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। মা হারানোর বেদনা জীবদ্দশায় পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন একটা অধ্যায়।
এই বেদনা ঠিক ভাষায় অনুবাদ করা যায় না। শব্দে আটকানো যায় না। মুখে বলাও যায় না, কেমন ব্যথাতুর সেই কষ্ট।
আজ আবার বসেছি মা সমতুল্য ছোট খালার মৃত্যুর কথা লেখার উদ্দেশ্যে। এই মুহূর্তে ভাবছি কী লিখবো স্বজন বিয়োগের এই করুণ কাহিনী, যেখানে নিজের ঘাড়ে বেদনার একটি বিশাল পাহাড়, সইতে পারছিনা ঠিকমতো।
সত্যি কথা বলতে কি, আমার এই মায়ের মতো খালাটির কথা লিখতে গিয়ে নিজেকে কোনো ভাবেই বিশ্বাস করাতে পারছিনা যে, তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
তবুও কঠিন এই বাস্তবতা মেনে নিতে হচ্ছে, বিধির অনিবার্য নিয়মের কাছে, এতে কোনো ভাবেই অসন্তোষ মনোভাব দেখানো যাবেনা, কারণ জন্মিলে মৃত্যুর স্বাদ প্রত্যেক প্রাণীকে গ্রহণ করতেই হবে।
আমার এই ছোট খালাকে আমরা খালাম্মা বলে ডাকতাম। খালাম্মা জীবনে কখনোই আমাদেরকে বুঝতে দেননি তিনি আমার,আমাদের মায়ের বোন খালা। অনেক সময় আমাদের ভাই বোনদের মায়ের চেয়েও বেশি এই খালাই মায়ের দায়িত্ব সম্পূর্ণ রূপে পূরণ করেছেন।
তিনি সবসময়’ই আমাদেরকে নিজ মায়ের মতো আদর,স্নেহের দৃষ্টিতে দেখতেন।
জীবনে বড়ই দুর্ভাগা ছিলেন আমার এই খালাম্মা, আমার জন্মের পুর্বে উনার বিয়ে হলেও কোনো সন্তানের মা হতে পারেননি।
খালাম্মার নিজ কোনো সন্তান না হওয়াতে তিনি যে খুব কষ্টে ছিলেন, তা মোটেও বলা যাবেনা। কারণ তিনি বোনের সন্তানদেরকে, ভাইয়ের সন্তানদেরকে নিজ সন্তানের দৃষ্টিতে দেখতেন।
মাঝে মাঝে আত্ম-সান্ত্বনা মূলক একথাও উনার মুখে শুনেছি যে, আমার সন্তান নেই এক ক্ষেত্রে বেশ ভালোই হয়েছে। কারণ যদি আমার সন্তান হওয়ার পর, সেই সন্তান ঠিক মানুষের মতো মানুষ হতো না। তখন কী করতাম, তার চেয়ে সন্তান একেবারেই হয়নি ভালোই হয়েছে।
চলবে ………………………(১)